গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা
কৃষিপ্রধান জনবহুল বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ও সুষম পুষ্টি বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্মৃতিশক্তি বিকশিত মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনের জন্য প্রাণিসম্পদে গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা গুরুত অপরিহার্য ।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ছিল ১.৬ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩.৩২ শতাংশ । কৃষিতে প্রাণিসম্পদের অবদান প্রায় ১৪.৩১ শতাংশ প্রাণিসম্পদের একটি বড় অংশ দখল করে আছে গবাদিপ্রাণি। কৃষিজীবী প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে যে গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা খুবই লাভজনক। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ছোট-বড়-মাঝারি অনেক গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে। যেসব খামারি গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপনার দিকে ভালো নজর রাখে, তারা নিঃসন্দেহে লাভবান। যেহেতু গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত বিষয়।নিম্নে গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হল।
সূচিপত্রঃ
- গবাদিপ্রাণির সুস্থতার লক্ষণ:
- খামার নির্মাণ:
- বাণিজ্যিকভাবে দুই সারিতে অবস্থানকারী গরুর ঘর অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখ
- গবাদি প্রাণীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকাঃ
- গবাদি প্রাণীর বাসস্থান:
- দুধ উৎপাদন বাড়ানোর কৌশলঃ
- বাছুরের পরিচর্যাঃ
- মোটাতাজাকরণের জন্য গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
- গরু মোটাতাজাকরণের পূর্বপ্রস্তুতিঃ
- দৈহিক ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ
- গবাদিপ্রাণির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কৃমিনাশক প্রয়োগঃ
- ইউ এম এস তৈরির পদ্ধতিঃ
- গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খাদ্য তালিকাঃ
- প্রতি 100 কেজি ইউ এম এস এস তৈরির পদ্ধতিঃ
- প্রস্তুত পদ্ধতিঃ
- গবাদিপ্রাণির টিকাদান কর্মসূচিঃ
গবাদিপ্রাণির সুস্থতার লক্ষণ:
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়,গবাদিপ্রাণির সুস্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে কতিপয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
১. প্রাণী তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সতর্ক থাকবে অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করবে
২. নাক মুখ চোখ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল থাকবে
৩. শরীরের লোম মসৃণ ও চকচকে থাকবে
৪. নাকের অগ্রভাগ ভেজা ভেজা ও বিন্দু বিন্দু ঘাম থাকবে
৫. জাবর কাটবে
৬. কলেজ নাড়াচাড়া করে মশা মাছি তাড়াবে
৭. স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করবে
৮. পিপাসা স্বাভাবিক থাকবে
৯. মলমূত্র স্বাভাবিক থাকবে
১০. শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খামার নির্মাণ:
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়,খামার নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে কতিপয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
১. খোলামেলা স্বাস্থ্যসম্মত ঘর
২. প্রতিটি গরুর জন্য ৩৫ বর্গফুট ৫ ফুট x ৭ ফুট জায়গা দরকার
৩. একসারি বা দুই সারিতে রাখতে হবে
৪. ঘরের উচ্চতা ১০ থেকে ১২ ফুট হতে হবে
৫. খড়ের ছাউনি টিন দিলে চাই দিতে হবে
৬. উত্তর-দক্ষিণমুখী হতে হবে।
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গবাদি প্রাণীর বাসস্থান:
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়,গবাদি প্রাণীর বাসস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,নিম্নে কতিপয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
গবাদিপ্রাণি যেখানে লালন পালন করা হয় সে সমস্ত জায়গা ও আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে পানি ও বৃষ্টির পানি যাতে ঘুরিয়ে চলে যায় সেজন্য বাসস্থান সামান্য ঢালু প্রকৃতির হলে ভালো হয় প্রতি গরুর জন্য ৩৫ বর্গফুট ৫ ফুট ৭ ফুট জায়গা প্রয়োজন ঘরের উচ্চতা ১০ থেকে ১২ ফিট হতে হবে ঘর উত্তর-দক্ষিণমুখী হলে ভালো হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে, আমরা গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবো।
বাণিজ্যিকভাবে দুই সারিতে অবস্থানকারী গরুর ঘর অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখ সারি বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
(ক) অন্তর্মুখী সারি বিশিষ্ট ঘরঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, দুটি প্রক্রিয়ায় বাসস্থান নির্মাণ করা হয়, প্রথমটির বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. এই ঘরে গরু মুখোমুখি অবস্থায় অবস্থান করে এই পদ্ধতিকে face in বা অন্তর্মুখী পদ্ধতি বলে
২. অভিসারী সম্মুখে খাদ্য দেওয়ার জন্য সারি থাকে সারি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ = ২৪ ইঞ্চি উচ্চতা = ২৬ ইঞ্চি এবং গভীরতা সমান সমান হবে
৩. উভয় সারি মধ্যে বারবার পরিচর্যা ও খাদ্য প্রদানের জন্য চলাচলের রাস্তা চার ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট থাকে যাতে পরিচর্যাকারী একই সাথে উভয় সারিতে খাদ্য পরিবেশন করতে সুবিধা হয়
৪. গরুর পিছনের দিকে কি থাকে বহুমুখী থাকে
৫. গরুর পিছনে বরাবর ড্রেন এক ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট থাকতে হবে
৬. প্রতিদিন ড্রেনের মধ্য থেকে গোবর ও মূত্র পরিষ্কার করতে হবে
আমরা গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবো।
(খ) বহির্মুখী সারি বিশিষ্ট ঘর
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, দুটি প্রক্রিয়ায় বাসস্থান নির্মাণ করা হয়, দ্বিতীয় টির বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. এই ঘরে গরু বিপরীতমুখী অবস্থায় অবস্থান করে
২. এই পদ্ধতি Face out বা বহুমুখী পদ্ধতি বলে
৩. উভয় সারির মাঝখানে চলাচলের রাস্তা 2 ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট থাকে এবং রাস্তার দুই পাশে ড্রেন 1 ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট থাকে
৪. গরুর এই পদ্ধতিতে গরু মুক্ত বাতাস পায়
৫. গরুর পিছন দিক অন্তর্মুখী থাকে
৬. এই রাস্তায় যাতায়াত করে গোবর সহজে পরিষ্কার করা যায়
৭. দুই সারি গরুর সামনে খাবার পাত্র দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সমান ২৪ ইঞ্চি উচ্চতার সমান ২৬ ইঞ্চি এবং গভীরতা ১৬ ইঞ্চি ও চলাচল রাস্তা ০২ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট থাকে
আমরা গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবো।
গবাদি প্রাণীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকাঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গবাদি প্রাণীর খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ খাদ্য সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে ব্যবহারের ফলে আমরা ভালো ফলাফল আশা করতে পারি। অবশ্যই খাদ্যের ব্যাপারটি গুণগতমান সঠিক আছে কিনা সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। নিম্নে খাদ্য তালিকা প্রদান করা হলো-
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে গাভী পালনের বিষয়ে উপরোক্ত খাদ্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা যথা নিয়মে তা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল আশা করতে পারব।
লক্ষ্য করুনঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, দুগ্ধ উৎপাদন কালীন সময়ে যদি উপরের উল্লেখিত চাঁটের চেয়ে বেশি পরিমাণে সবুজ ঘাসের ব্যবস্থা করা যায়। তবে ফিডের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫% হারে কমিয়ে দিতে হবে। যদি উপরের উল্লেখিত চাঁট অনুযায়ী সবুজ ঘাস না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ফিডের পরিমান কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে এসব ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ভেটেরিয়ান এর সঙ্গে পরামর্শ করার অনুরোধ রইলো।
দুধ উৎপাদন বাড়ানোর কৌশলঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গাভীর দুধ উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি আমরা গাভীকে খাবার খাওয়ানোর পর তা থেকে দুধ সঠিকভাবে না পায় তাহলে আমরা লাভবান হতে পারব না এজন্য আমাদেরকে নিম্নে কতিপয় বিষয়গুলো নজর রাখতে হবে-
১. প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করানো
২. জাবর কাটার জন্য গাভীকে অন্তত 8 ঘণ্টা সময় দেওয়া
৩. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ
গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, দুধ উৎপাদনের কৌশল হিসেবে উপরোক্ত বিষয়গুলো নজরে রাখা হয়। তাহলে আমরা সঠিক ভাবে দুধ পাব।
বাছুরের পরিচর্যাঃ
গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় বাছুরের পরিচর্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ একটি গাভী থেকে প্রতিবছর একটি বাছুর আমাদের খামারকে বৃদ্ধি ও প্রসার করতে সহায়তা করে থাকবে কিভাবে আমরা একটি বাছুরের পরিচর্যা করব নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-
১. জন্মের পরপরই বাছুরকে শালদুধ খেতে দিতে হবে।
২.সাস্থ্যসম্মত বাসস্থান সুষম খ্যাদ্য পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।চাহিদা অনুযায়ী দুধের পাশাপাশি মিশ্রখাদ্য, খড় ও সবুজ ঘাস খাওয়ানোর অভ্যস্থ করতে হবে।
৩.নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
৪.নিয়মিত কৃমিনাশক ঔ ঔষধ খাওয়াতে হবে
৫. গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলির টিকা প্রদান করতে হবে
গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায় বাছুরের পরিচর্যা যদি আমরা সঠিকভাবে করি, তাহলে বাছুরটি যখন বড় হবে, তখন তা থেকে আমরা ভাল ফলাফল আশা করতে পারব।
মোটাতাজাকরণের জন্য গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, উপরোল্লেখিত আলোচনাগুলো মূলত গাভীর উপর করা হয়েছে। নিম্নে আলোচনা গুলো গরু মোটাতাজাকরণের ওপর করা হবে। সুতরাং একটি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কতিপয় বৈশিষ্ট্যগুলো নজরে আনতে হয়। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-
১. ১.৫-২ বছর বয়সের গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভালো
২. এঁড়ে বাছুর মোটাতাজাকরণ করার জন্য নির্বাচন করা ভালো কারণ এঁড়ে বাছুর দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে দেশী জাতের চেয়ে সংকর জাতের বাছুর মোটাতাজাকরণ করার জন্য নির্বাচন করা ভালো
৩. বুক চওড়া ও ভরাট চামড়াওপাতলা
৪. মাথা ছোট কপাল প্রশস্ত
৫. পেট ও বুকের সঙ্গে সমান্তরাল
৬. পশুর শারীরিক গঠন চৌকোনোকৃতির হবে।
৭. চক্ষু উজ্জ্বল মুখ গহবর বড় ও নাসারন্দ্র প্রশস্ত হবে।
৮. পা খাটো প্রকৃতি ও ঘাড়ের ঘোড়াগুলি স্ট্রিত আজ ওর প্রশস্ত ও বিস্তৃত
৯. শিরদাঁড়া সোজা হতে হবে খাদ্যাভাবে শুকানো
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, আমরা গরু ক্রয় করার সময় যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে গরু ক্রয় করি, তাহলে আমরা বেশি লাভবান হতে পারব।
গরু মোটাতাজাকরণের পূর্বপ্রস্তুতিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, সব কাজেরই প্রস্তুতিমূলক কিছু কর্মকান্ড থাকে তেমনি গরু মোটাতাজাকরণের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কিছু বিষয় রয়েছে যা নিম্নে প্রদত্ত হলো-
১. গরুর ক্ষত ও কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসা করানো
২. কৃমির জন্য কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো
৩. ভ্যাক্সিনেশন করা
৪. পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দানাদার খাদ্যের মজুদ নিশ্চিত করা
৫. বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গরু মোটাতাজাকরণের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আমাদের গবাদিপ্রাণি সুস্থ এবং সবল থাকবে। রোগমুক্ত রাখার জন্য কতিপয় বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দৈহিক ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, যেহেতু আমরা এই পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করার প্রক্রিয়া করছি, সেহেতু অবশ্যই আমরা গবাদিপ্রাণির ওজন নির্ণয় করে খাতায় লিপিবদ্ধ করব অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গরুর ওজন নির্ণয় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকল্প চালুর শুরুতে ক্রয় কৃত সবগুলো গরুর ওজন পৃথক পৃথকভাবে রেকর্ড করতে হবে এবং প্রতি ১৫ দিন পর পর প্রতিটিঅগরুর ওজন খাবারের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। তাতে পালনের অগ্রগতি বোঝা যায়। গরু প্রকৃত ওজন নির্ণয় করার জন্য ব্যালেন্স ব্যবহার করা উত্তম তবে সহজে একটি ফর্মুলাতে গরুর ওজন বের করা যায় এতে গরু সঠিক ওজন এর কাছাকাছি ফলাফল পাওয়া যায় এই পদ্ধতিতে টেপের ফিতার সাহায্যে গবাদিপ্রাণির দৈর্ঘ্য ও বুকের মাপ নেওয়া হয়।
গরুর দৈর্ঘ্য(L) = পশুর লেজের ঘোড়া (পিনবোন) থেকে অথবা পাচার উচু হাড় হতে শোল্ডার পয়েন্ট বা গলার মাঝ বরাবর পর্যন্ত ।
বুকের বেড়(G) = সামনের দু পায়ের ঠিক পিছনের দিক বরাবর গরুর বুকের বেড়। দৈহিক ওজন (কেজি)=L দৈর্ঘ্যx ( বুকের বেড় G)২
= ওজন
৬৬০
গবাদিপ্রাণির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কৃমিনাশক প্রয়োগঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গবাদিপ্রাণির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কৃমিনাশক প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নে আলোচনা করা হল-
১. কোন রোগে আক্রান্ত কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে সুষ্ঠু চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলতে হবে
২. গরুকে কৃমিনাশক ঔষধ এর মাধ্যমে কৃমি মুক্ত করতে হবে কারন আমাদের দেশে প্রায় 100% গরু ক্ষেপেছে আক্রান্ত হয় এজন্য গরু ক্রয় করার পর অবশ্যই কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এরপর তিন থেকে চার মাস পর পর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে বাজারে বিভিন্ন ব্রডস্পেকট্রাম কৃমিনাশক ওষুধ পাওয়া যায়।
৩. কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগের পর লিভার টনিক ও ভিটামিন দিতে হবে।
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, উপরোক্ত বিষয়গুলি গুরুত্ব না দিলে আমরা লাভবান হতে পারবোনা।
গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খাদ্য তালিকাঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্যের ভূমিকা অপরিহার্য। সঠিক পরিমাণ খাবার না দিলে আমরা গবাদিপ্রাণির মাংস বৃদ্ধি সঠিক ভাবে পাবো না তাই নিম্নে দৈহিক ওজনের ওপর ভিত্তি করে খাবারের তালিকা প্রণয়ন করা হলো-
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, তালিকাভুক্ত খাবার ছাড়াও ইউ এম এস এস পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করে গবাদিপ্রাণি কে মোটা তাজা করন করা সম্ভব।
ইউ এম এস তৈরির পদ্ধতিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, এম এস এস পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করার ফলে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায় তবে খেয়াল রাখতে হবে যে পরিমাণের বেশি খাওয়ানো যাবে না।
ইউরিয়া মোলাসেস ট্রে ইউ এম এস ইউরিয়া মোলাসেস ও ফ্লোরে এর মিশ্রণকে সংক্ষেপে ইউ এম এস বলে এই মিশ্রণটি শুকনা খড় এর পরিবর্তে প্রতিদিন গবাদিপ্রাণি কে খাওয়ানো যায় মিশ্রণটিতে খরচ ও ইউরিয়ার অনুপাত যথাক্রমে ৮২ঃ১৫ঃ৩
প্রতি 100 কেজি ইউ এম এস এস তৈরির পদ্ধতিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, ইউ এম এস এস পদ্ধতি অবশ্যই আমরা প্রয়োগ করব, নিম্নে ইহা তৈরির প্রণালী প্রদত্ত হলো-
১.খড়=৮২ কেজি
২.চিটাগুড়=১৫
৩.ইউরিয়া সার=০৩ কেজি
৪. পানি=১০ লিটার/ পরিমাণ মতো
প্রস্তুত পদ্ধতিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, ইউ এম এস এস পদ্ধতিতে আমরা কিভাবে তৈরি করব সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
প্রথমে ঘর ইউরিয়া মোলাসেস ও পানি সঠিক পরিমাণে মেপে নিতে হবে নেওয়ার পর খড়্গুলোকে ৩-৪ করে কেটে নিতে হবে। ইউরিয়া মোলাসেস পানিতে মিশিয়ে দ্রবন তৈরি করতে হবে। কেটে নেওয়া শুকনো খড় গুলোকে পরিষ্কার পলিথিন এর ওপর বিছাতে হবে। এবার পানিও ইউরিয়া মোলাসেস দিয়ে খড়্গুলোকে ভালোভাবে মেশালেই ইউ এম এস তৈরি হবে উপকরণগুলো পরিমাণ কখনো কম বা বেশি করা যাবে না একবার প্রস্তুত করার পর তা তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না।
ভুলক্রমে যদি কম বেশি হয়ে যায় তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে সুতরাং উল্লেখ্য যে এসব ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ভেটেরিয়ান এর সঙ্গে পরামর্শ করার অনুরোধ রইলো।
গবাদিপ্রাণির টিকাদান কর্মসূচিঃ
গরু মোটা তাজা করণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনায়, গবাদি প্রাণির টিকা কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে টিকার নাম প্রয়োগ মাত্রা বয়স প্রবৃত্তি এবং প্রয়োগের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-
সমাপনী বক্তব্যঃ
আমরা যদি সঠিকভাবে, সঠিক উপায়ে,সঠিক দিক নির্দেশনা মেনে খামার ব্যবস্থাপনায় গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধবতী গাভী পালন ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত হয়ে খামার ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে পারি,তাহলে আমরা ভালো ফলাফল আশা করতে পারব । আমার এই লেখা দ্বারা যদি আপনারা একটু উপকৃত হন, তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং গ্রুপে পোস্ট করবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
পত্রিকা ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url