ঘর থেকে বের হওয়া ও প্রবেশ করার দোয়া অর্থসহ বাংলায় উচ্চারণ এবং হাদিসের বর্ণনা
ঘর থেকে বের হওয়া ও প্রবেশ করার দোয়া অর্থসহ বাংলায় উচ্চারণ এবং হাদিসের বর্ণনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি যে বিষয়টি আলোচনা করব সে বিষয়টি শিরোনাম দেখে আপনারা বুঝতে পেরেছেন কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে ,মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার গোলাম হিসেবে সুতরাং প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে মহান সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে শুরু করব। এতে করে আমাদের কাজগুলো সহজ হবে এবং কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে। প্রতিনিয়ত এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রতি খুশি থাকবেন । আমরা যখন ঘর থেকে বাহিরে বের হবো তখন নিম্নে উল্লেখিত দোয়াটি করব।
সূচিপত্র
ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া
ঘরে প্রবেশের দোয়া
১। ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া আরবি অর্থসহ বাংলায় উচ্চারণ
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله
উচ্চারণ:বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লা-হি লা হাওলায়ে ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
তাওয়াক্কালতু আলাল্লা-হ, না- 'হাওলা অর্থ: "আল্লাহর নামে। আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। কোনো অবলম্বন নেই এবং কোনো শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।
আনাস বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ কথাগুলো বলবে, তাঁকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) বলা হবে: তোমার আর কোনো চিন্তা নেই, তোমার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করা হলো, (তোমাকে সঠিক পথ দেখানো হলো) এবং তোমাকে হিফাযত করা হলো। আর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়।" অন্য বর্ণনায়: “এক শয়তান অন্য শয়তানের সাথে সাক্ষাৎ করে বলে, সে ব্যক্তির সকল দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছে, হিফাযত করা হয়েছে এবং পথ দেখানো হয়েছে, কীভাবে আমরা তার ক্ষতি করতে পারি?
" হাদীসটি হাসান সহীহ । ১৫২||
২।ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া আরবি অর্থসহ বাংলায় উচ্চারণ
«بسم الله توكلت على الله اللهم إنا نعوذ بك من أن نزل أو تضل
أو تظلم أو تظلم أو تجهل أو يجهل علينا»
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লা-হি, আল্লা-হুম্মা, ইন্না না'উযূ বিকা মিন আন নাযিল্লা, আও নাছিল্লা, আও নায়লিমা আও নুষলামা, আও নাজহালা আউ ইউজহালা আলাইনা ।
অর্থ: “আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করছি, হে আল্লাহ, আমরা আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি যে, আমরা পদস্খলিত হব বা বিভ্রান্ত হব, বা আমরা অত্যাচার করব বা অত্যাচারিত হব, বা আমরা কারো সাথে মূর্খতাসুলভ আচরণ করব বা কেউ আমাদের সাথে এরূপ মূর্খতাসুলভ আচরণ করবে।”
উম্মু সালামাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ্ থেকে বাহির হওয়ার
সময় এ দু'আ পাঠ করতেন। হাদীসটি সহীহ। ১৫৩/
রাতদিন যে কোনো সময় ঘর থেকে বের হতে মুমিনের উচিত এ যিকরগুলো অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে অন্তরকে আল্লাহর দিকে রুজু করে পাঠ করা।
ঘরে প্রবেশের দোয়া আরবি অর্থসহ বাংলায় উচ্চারণ
«اللهم إني أسألك خير المولج وخير المخرج بسم الله ولجنا ويسم الله خرجنا وعلى الله ربنا توكلنا »
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকা খাইরাল মাউলিজি ওয়া খাইরাল মাখ্রাজি, বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা- ওয়া বিসমিল্লা-হি খারাজনা- ওয়া 'আলা রাব্বিনা- তাওয়াক্কাল্না- ।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি উত্তম প্রবেশস্থল ও উত্তম বহির্গমনস্থল। আল্লাহর নামে প্রবেশ করলাম এবং আল্লাহর নামে বাহির হলাম এবং আমাদের প্রভু আল্লাহর উপর নির্ভর
আমরা দেখেছি, রাসূলুল্লাহ ঘরতে প্রবেশের সময় আল্লাহর উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, আল্লাহর দোয়া পাঠ করে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান সে ঘরতে অবস্থান করতে পারে না। ঘর প্রবেশের মাসনূন মূল যিক্র “সালাম”। আবূ মালিক আশআরীর * সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন: তোমাদের কেউ যখন প্রবেশ করবে তখন যেন সে এ কথাগুলো বলে, এরপর তার স্ত্রী-পরিজনদেরকে সালাম দিবে।
” হাদীসটির রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য, কিন্তু হাদীসটি "মুরসাল" হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫৪/
ঘরে প্রবেশের দোয়া (সালাম)
«السلام عليكم ورحمة الله وبركاته»
উচ্চারণ: আস-সালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া
বারাকাতুহ।
অর্থ: আপনাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও তার বরকত।
ঘরে প্রবেশের সময় উপরের দু'আ পাঠের পরে ঘরে যার সাথেই দেখা হবে তাকে সালাম দিতে হবে।
উপরের হাদীসে তা বলা হয়েছে। সালাম ইসলামের অন্যতম ইবাদত। সালাম প্রদানকারী ও উত্তর প্রদানকারী উভয়েই অগণিত সাওয়াবের অধিকারী হন। উপরন্তু সালাম মানব জীবনের অন্যতম দু'আ। এতে শান্তি, রহমত ও বরকতের দু'আ করা হয়। একটিবারের সালামও যদি কবুল হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তির জীবনে আর কিছুই অপূর্ণ থাকবে না। জীবনে শান্তি, রহমত ও বরকত পাওয়ার পর আর কী বাকি থাকে?
আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, ছেলে-মেয়েরা পিতা-মাতাকে ও পিতা-মাতা ছেলে-মেয়েকে সালাম দেন না। এক ধরনের শয়তানী ওয়াসওয়াসা তাদেরকে এ অতুলনীয় কল্যাণকর কর্ম থেকে বিরত রাখে, যে ওয়াসওয়াসাকে অনেকে 'লজ্জা' নাম দেন। সাধারণ জ্ঞানেই আমরা বুঝতে পারি যে, একজন মানুষের দু'আর সবচেয়ে বড় হকদার তার স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তানগণ। অথচ আমরা অন্যান্য মানুষকে সালাম প্রদান করি, তাদেরকে সাওয়াব অর্জনের সুযোগ ও দু'আ প্রদান করি, কিন্তু আপনজনদেরকে বঞ্চিত করি।
সবাইকেই সালাম প্রদান সুন্নাত। আর স্বামী, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যগণকে সালাম দেওয়া অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। হাদীসে বিশেষভাবে এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য বিশেষ সাওয়াব ও বরকতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আবু উমামা বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন:
«ثلاثة كلهم ضامن على الله إن عاش كفي وإن مات دخل الجنة:
من دخل بيته بسلام فهو ضامن على الله عز وجل» “তিন ব্যক্তি: আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের জামিন ও সংরক্ষক, যদি বেঁচে থাকে তবে তার সকল বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষা করা হবে এবং যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করল সে আল্লাহর জামিনদারীতে চলে গেল...।” হাদীসটি সহীহ ১৫৫)
অন্য হাদীসে আনাস বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন:
«إذا دخلت على أهلك فسلم تكون بركة عليك وعلى أهل بيتك» “যখন তুমি তোমার ঘরতে প্রবেশ করবে তখন তোমার স্ত্রী-পরিজনকে সালাম দেবে; এ সালাম তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য বরকতের উৎস হবে।” হাদীসটি হাসান (১৫৬
দিনে বা রাত্রে যে কোনো সময়ে ঘরে প্রবেশের সময় এ সকল মাসনূন বাক্য দ্বারা আল্লাহর যিক্র করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য।
পত্রিকা ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url