স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর ১০টি হক বা দাবী
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য বলে শেষ করার মত নয়,নব দম্পতির ফুল শয্যায় শুয়ে, শুধু আনন্দ উপভোগ করলে ও স্ত্রীকে আপাত মস্তকে আপন্দ প্রদান করলে স্বামীর কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। বরং স্ত্রীকে সর্বতোভাবে শারীরিক ও মানসিব আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ সুবিধা প্রদান করলে স্ত্রী স্থায়ীভাবে সুখী হতে পারে। অনেকে স্ত্রীকে শুধু শারীরিক আনন্দ উপভোগ করার সামগ্রী বলেই মনে করে ও তদ্রূপ ব্যবহার করে। আবার অনেকে যথেচ্ছভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নিজের আধিপত্য প্রকাশ করে।
পক্ষান্তরে স্ত্রীকে এমনভাবে নিজের করে নিতে হবে, যাতে স্ত্রী মনঃক্ষুণ্ণ না হয়, অবাধ্যও না হয়। তাই স্ত্রীকে সর্বদা সুনজরে দেখতে হবে ।
- সূচিপত্রঃ-
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর ১০টি হক বা দাবী
- স্ত্রী জাতি মন
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি কুরআন এর আলোকে
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি হাদিস
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য মাঝে রাগ সংবরণ না করার কারণে যা হতে পারে
- প্রকৃত মুসলমান
- সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
- স্ত্রীকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার ৬ টি কারণ
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর ১০টি হক
স্ত্রী জাতি মনঃ-
স্ত্রী জাতি স্বভাবতই সরলমনা ।স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল, তাদের সরল প্রকৃতি রক্ষা করাই স্বামীর কর্তব্য। অন্যথায় মানুষের ধর্ম অতিক্রম করে পশুদের গণ্ডির মধ্যে পতিত হওয়া স্বাভাবিক। স্ত্রীকে অর্ধাঙ্গিনী মনে করে তার প্রতি নিজের শরীরের মত যত্ন করতে হয় এবং তার সাথে সাদর সম্ভাষণে কথাবার্তা বলতে হয়।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি কুরআন এর আলোকেঃ-
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে ঘোষণা করেছেন- এ
هن لباس لكم وانتم لباس - অর্থাৎ, তারা (স্ত্রীলোক) তোমাদের পোশাক বা আবরণ এবং তোমরা তাদের পোশাক।
এখানে বলা যেতে পারে যে, নারী-পুরুষের ঈমান রক্ষাকারী আবরণ। নারী সাথে থাকলে বাসস্থানেই হোক বা পরবাসেই হউক, পুরুষের ঈমান নষ্ট হতে পারে না। অপরপক্ষে উভযের গুনাহগার হবার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে ।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি হাদিসঃ-
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি এ সম্পর্কে রাসুল আকরাম (স) বলেছেন: নারী পুরুষের অর্ধেক ঈমান। বিয়ে করে নারীর প্রতি পূর্ণমাত্রায় সদ্ব্যবহার না করলে কর্তব্য বিচ্যুতির জন্য স্বামী পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়। তখন আর তার সংশোধনের সময় থাকে না। স্ত্রীকে নিতান্ত তুচ্ছজ্ঞান করলে বা নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে নিতান্ত অবহেলিত বাঁদী-দাসীর মত মনে করলে করলে তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য মাঝে রাগ সংবরণ না করার কারণে যা হতে পারেঃ-
শিক্ষিত লোকদের মাঝেও দেখা যায় যে তারা তাদের স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে এবং তাদের নানা রকম খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে এমনকি রাগ সংবরণ করতে না পেরে তারা এমন ভাষায় কথা বলে যাতে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যায় ।
যে স্ত্রী তার জীবনসঙ্গীনী ও উন্নতি অবনতির কারণ, তাকে নিদারুণ কষ্ট দেয়া ও নির্মম অত্যাচার করা কোনমতেই উচিত নয়। এজন্য পরকালে শুধু তার কাছে কেন, আল্লাহর কাছেও দায়ী হতে হবে।
প্রকৃত মুসলমান
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে প্রকৃত মুসলমান হওয়া যায় না কোরআন ও হাদীসের অনুসারী প্রকৃত মুসলমান হয়ে থাকলে তার মনে করা উচিত তার উপর সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা যেসব গুরুভার চাপিয়ে দিয়েছেন, এর মধ্যে স্ত্রীর প্রতি যত্ন নেয়া ও তার সদ্ব্যবহার করা একটি। মানবের প্রতি জগতের বহুবিধ কর্তব্য নিরূপিত আছে, এর কয়টি মানব সম্পন্ন করতে পারে? সেদিকে খেয়াল রেখে মানব ধর্ম প্রতিপালন করতে পারলে ফেরেশতা চরিত্র-সম্পন্ন হতে পারে। অন্যথায় মানবের মানবত্ব ধুলিকণায় ধূসরিত হয়ে অণুপরাণুতে পরিণত হয়ে যায়। বলতে কি, সে মানব জাতির নামের উপযুক্ত নয় ।
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, স্ত্রীজাতি স্বভাবত দুর্বল। তারা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালাই নারী জাতিকে পুরুষ জাতি হতে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সামান্য খুঁটিনাটি দোষ-ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। যে শিক্ষিত ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন বা ইসলামের ইলমে আলেম, এ বিষয়ে অবগত আছেন তিনি কখনও স্ত্রীর প্রতি খারাপ, নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে না। তাই এতে অনভ্যস্ত শিক্ষিত-অশিক্ষিত মুসলমানদের উচিত, সুমিষ্ট ভাষায় সম্বোধন করে নিজের কর্তব্য অনুযায়ী তার প্রতি ব্যবহার করে তার মন জয় করা।
সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ করে সাংসারিক কাজকর্ম সম্পন্ন করিয়ে নেয়া। তা হলেই তার জ্ঞানের উদয় হবে এবং সংসার সুখের হবে। সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এটা পরীক্ষিত হয়েছে যে, স্ত্রীকে মারপিট করার বা নানাভাবে অত্যাচার করার দরুন যদি স্ত্রী আত্মহত্যা করে তা হলে তার আত্মা এসে যেমন স্বপ্নের মধ্যে স্বামীকে কষ্ট দেয়, তেমনি সজাগ অবস্থায়ও হৃদয়বিদারক যন্ত্রণা ভোগ করে, যা ইসলাম ধর্মে অবৈধ। পক্ষান্তরে স্বামী সুশিক্ষিত ও সুবিবেচক হলে স্ত্রীকে নিজেহর মতানুযায়ী বাধ্যগত ও ধর্মপ্রাণা রূপে তৈরী করে। তুলতে পারে। অতএব স্ত্রীর প্রতি কোন প্রকার জুলুম-অত্যাচার করবে না। কারণ, স্ত্রী স্বামীর কাছে আমানতী সম্পদ স্বরূপ। স্ত্রী হঠাৎ কোন প্রকার অন্যায় কাজ বা সাংসারিক কোন ক্ষতি করে ফেললে তাকে অমনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ বা মারপিট করতে নেই। যার দ্বারা কিছু আসে যায় না। অস্বাভাবিকভাবে মারপিট করলে ও অতিরিক্তি রাগ হলে রাগের বশে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিয়েও বসতে পারে। তাই যতদূর সম্ভব বুদ্ধি-বিবেচনা করে স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করবে। তা হলে স্ত্রীও হঠকারিতা বা অন্যায় কার্য পরিত্যাগ করে স্বামীর সুমধুর ব্যবহারে মুগ্ধা হতে পারে।
স্ত্রীকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার ৬ টি কারণ
হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, স্ত্রীলোক অত্যন্ত সরলমনা। নিম্নলিখিত কারণ সমূহের দরুন তার খুঁটিনাটি ত্রুটি মার্জনা করে নিবে।
(১) স্ত্রী স্বামীর পক্ষে জাহান্নামের বেড়াস্বরূপ। কারণ, স্ত্রী থাকলে যেনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
(২) স্ত্রী-স্বামীর পাহারাদার। স্বামী কোথাও গেলে স্ত্রী তার মালপত্র হিফাজত করে।
(৩) স্ত্রী ধোপার কাজ করে, স্বামী বা ছেলেমেয়েদের গোসল করার পর তাদের কাপড়-চোপড় ধুয়ে দেয়। (৪) স্ত্রী দাই স্বরূপ। কারণ, ছেলেমেয়েকে দুধ দেয় এবং তাদেরকে লালন-পালন করে।
(৫) স্ত্রী সুইপারের কাজ করে। কারণ, সে ছেলেমেয়েদের পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদি পরিষ্কার করে।
(৬) স্ত্রী পাচকের কাজ করে। কারণ, সে কষ্ট করে সকলের জন্য নানা প্রকার খাদ্যসামগ্রী রান্না করে।
অতএব, এমন উপকারিণী স্ত্রীকে কেবল বাদী-দাসীর ন্যায় বিবেচনা না করে তার সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ করতে হবে।
মাঝে মাঝে তার সাথে একত্রে বসে খানা খাবে। এটা সুন্নত। হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর বিবিদের সাথে এক দস্তরখানে বসে খানা খেতেন। স্ত্রীর খাওয়া, উঠাবসা ইত্যাদির সময়ে এমন কৌতুক করবে, যাতে স্ত্রী খুশী থাকে। সংসারে বিপদ-আপদের দরুন স্ত্রীর উপর অনর্থক কোন প্রকার স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য বা মিলন তত্ত্ব
দোষারোপ করে তাকে সর্বদা অসন্তুষ্ট রাখবে না । কোন প্রকার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হয়ে পড়লে তা সাথে সাথে সংশোধন করে নিবে বা মার্জনা করে দিবে। মোটকথা, স্ত্রীর সাথে এমন ব্যবহার করতে হবে, যেন স্ত্রী স্বামীর সুখে সুখী ও দুঃখে দুঃখিত হয়, স্বামী খেলে স্ত্রী খায়, আর স্বামী না খেলে স্ত্রীও না খেয়ে থাকে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর ১০টি হক বা দাবী
© স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, স্ত্রীর ১০টি হক বা দাবী আছে । স্ত্রীর প্রতি প্রকৃত ও প্রগাঢ় ভালবাসা প্রদর্শন করতে হলে নিম্নলিখিত ১০টি হক আদায় করতে হবে।
(১) স্ত্রীর মোহরানার হক আদায় করে দিবে। এককালীন অর্থসম্পত্তি দ্বারা আদায় করতে না পারলে জীবন ভরে ক্রমান্বয়ে অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে।
(২) রীতিমত ভাত-কাপড়ের ও বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত করে দিবে। শীতের সময় শীতের পোশাক, গ্রীষ্মের সময় গরমের উপযোগী পোশাক প্রদান করবে এবং অন্যান্য আবশ্যকীয় বস্তুসমূহ সংগ্রহ করে দিবে।
(৩) শরীয়তের বিধানের বাইরে স্ত্রীকে কোন প্রকার শাস্তি দিবে না। স্ত্রীর মুখমণ্ডলের উপর আঘাত করা হারাম। স্ত্রীকে কেন, বাঁদীকেও শরীয়তের বাইরে শাস্তি দিলে গোনাহগার হতে হবে।
(৪) শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়কে আদর যত্ন করবে। তা হলে স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকবে।
(৫) সর্বদা স্ত্রীর সাথে হাসিমুখে কথা বলবে। সে অন্যায় করলে নিজে ন্যায় পথে থেকে তাকেও ন্যায় পথে আনতে চেষ্টা করবে, এতেও অন্যায়ভাবে বা অতিরিক্ত কিছু বলবে না।
(৬) স্ত্রীজাতি বলে তার ভুলত্রুটি ও দোষ থাকতে পারে, সুতরাং রান্নাবান্না করতে কোন ত্রুটি হয়ে গেলে তার সাথে রাগারাগি করবে না, গালিগালাজ করবে না বা মারপিট করবে না, বরং পূরণ করে দিতে হবে। (৭) স্ত্রী নিজ নামে কোন সম্পত্তি করতে চাইলে বিনা বাধায় তাক তা করে দিবে।
(৮) স্ত্রীকে শরীয়তের মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা দিবে। কালেমা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, পাক-পবিত্র, ইশরাক, চাশত, আওয়াবীন নামাজ সম্বন্ধে। শিক্ষা দিবে।
(৯) নিজে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে উঠরে স্ত্রীকেও তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য উঠাবে, এতে সওয়াব পাওয়া যায়। স্ত্রীকে এভাবে দুনিয়াতে নিজের সঙ্গিনী করে নিতে পারলে আখিরাতেও সে সঙ্গিনী হবে। যে স্বামী নিজ স্ত্রীর ভাল না চায়, সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে না বলে মনে হয়।
(১০) স্ত্রীকে পর্দানশীলতার মধ্যে রাখবে। শুধু বাড়ী-ঘরের বেড়া দিয়ে পর্দা রক্ষা করলেই চলবে না, তার শরীর ঢাকার জন্য কাপড়-চোপড় এবং বোরকা দিতে হবে। সে বাড়ীর বাইরে যে কোনস্থানে বা যে কোন বাড়ীতে বেড়াতে গেলে, পরপুরুষ যাতে না দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সে স্বামী গোনাহার হবে, এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ স্ত্রী স্বামীর অধীন, তাই স্ত্রীর ভালমন্দ স্বামীকেই দেখতে হবে।
সুতরাং স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে সুসন্তান লাভের আশা করলে স্ত্রীর প্রতি সবিশেষ সুদৃষ্টি প্রদান করবে এবং যথোপযুক্ত যত্ন করবে। যথা—কোন কৃষক তার শস্যক্ষেত্র হতে শস্য উৎপাদন করতে চাইলে প্রথমতঃ গরু-ছাগলের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবার জন্য ক্ষেতে বেড়া দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ ভাল বীজ বপন করার পর গাছের উপযুক্ত যত্ন নিতে হবে। তা হলে সে এ শস্যক্ষেত থেকে উত্তম শস্য লাভ করা যাবে।
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, স্ত্রীজাতি স্বভাবত দুর্বল। তারা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালাই নারী জাতিকে পুরুষ জাতি হতে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সামান্য খুঁটিনাটি দোষ-ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। দোষ ধরা থেকে বিরত থাকবো।
পত্রিকা ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url