ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) জীবনী imam ghazali bangla
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) আগমনঃ-
(১০৫৮-১১১১ খ্রিঃ)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পথ হারা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য এবং পৃথিবীর বুক থেকে সকল অশিক্ষা-কুশিক্ষা অন্যায় অসত্য শোষণ ও বিচার ব্যবস্থার অপো কুসংস্কার এবং মানব রচিত মতবাদ মতাদর্শের মূলোৎপাটন করে আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লক্ষাধিক নবী-রাসূল প্রেরন করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পরে পৃথিবীতে আর কোন নবী রাসুলের আবির্ভাব ঘটবে না।মানুষকে সুপার দেখানোর জন্য যুগে যুগে কিছু হোক মহামানবের আবির্ভাব ঘটবে এদের মধ্যে ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) হলেন একজন।
পথহারা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধানঃ-
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক নবুওতের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে একথা সত্য নয় যে প্রত্যেক যুগেই পথহারা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য ঐশী জ্ঞানের সমৃদ্ধ এক বা একাধিক মানুষের আবির্ভাব ঘটবে এ ধরাতে। তারা নবী কিংবা রাসুল হিসেবে আবির্ভাব হবে না । কিংবা নতুন কোনো মত বা মতাদর্শ প্রচার করবে না বরং তারা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে এবং তার আদর্শের দিকে আহবান করবেন মানবজাতিকে। তাদের চরিত্র স্বভাব হবে মার্জিত আকর্ষণীয় ও অনুপম ।
তারা দুনিয়াকে ভোগ-বিলাসের লক্ষ্য হিসাবে মনে করবে না । তাদের চরিত্র স্বভাব অসাধারণ জীবনযাত্রা দেখে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ফিরে আসবে সত্য ন্যায়ের পথে ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) ছিলেন তাঁদের একজন।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) আগমন সময় কালঃ-
একাদশ শতাব্দীতে মানুষ অশিক্ষা-কুশিক্ষা কুসংস্কার ও নানাবিধ পাপ কাজে লিপ্ত হতে শুরু করেছিল অপরদিকে শিক্ষিত যুব সমাজ এবং পশ্চাত্যের অন্যান্য মুসলিম দার্শনিকদের ভ্রান্ত মতবাদের বিশ্বাসী হয়ে,ইসলামের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন পৃথিবীতে সত্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হন ইমাম গাজ্জালী ( রাঃ) ।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) জন্ম গ্রহণঃ-
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম মনীষীগণঃ-
ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রস্থল ইরানের জন্মগ্রহণ করেছিলেন শেখ সাদী মহাকবি ফেরদৌস আল্লামা হাফেজ আল্লামা রুমির মতো বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম মনীষীগণ।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বংশ পরিচয়ঃ-
ইমাম গাজ্জালী(রাঃ) এর প্রকৃত নাম আবু মুহাম্মাদ গাজ্জালী কিন্তু তিনি ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) গাজাল শব্দের অর্থ উচ্চতা কাঁটাতার বংশগত উপাধি কারো মতে তার পিতা কিংবা পূর্বপুরুষগণ সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন তাই উপাধি হয়েছে গাজ্জালী।
পিতৃহারা ইমাম গাজ্জালী (রাঃ)
তাঁর পিতা ছিলেন দরিদ্র এবং শৈশবে তিনি তাঁর পিতাকে হারান পিতার মৃত্যুতে তিনি নিদারুণ অসহায় অবস্থায় পড়েন ইমাম গাজ্জালী (রাঃ)
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) জ্ঞান অর্জনঃ-
শত কষ্টের মাঝেও ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) সাহস হারাননি। জ্ঞানলাভের প্রতি ছিল ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) খুব আগ্রহ। তৎকালীন যুগের বিখ্যাত আলেম হযরত আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ এবং হযরত ইসমাইল এর নিকট তিনি কুরআন হাদীস ও বৃদ্ধি স্বাভাবিক জ্ঞান লাভ করেন। এর পর ছুটে যান নিশাপুরের নিজামিয়া মাদ্রাসায় তৎকালীন যুগে নিশাপুর ছিল ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান ও দর্শন সাহিত্য সমৃদ্ধ ও উন্নত এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সর্বপ্রথম ও পৃথিবীর বৃহৎ নিজামিয়া মাদ্রাসা সেখানে তিনি উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল মালিক রহমতুলা এর নিকট ইসলামী আইন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বাগদাদে আগমনঃ-
মায়ের মৃত্যুর পর তিনি চলে আসেন বাগদাদে এখানে এসে তিনি একটি মাদ্রাসা অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং বিভিন্ন জটিল বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞান ও দর্শনের শক্তি আস্তে আস্তে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যের সন্ধান
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) আল্লাহকে পাবার জন্য এবং আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যের সন্ধান ধন-সম্পদ ঘরবাড়ি মায়া-মমতা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন, অজানা এক পথে । প্রায় দশটি বছর ঘুরে বেড়াত দেশ থেকে দেশান্তরে আল্লাহর ইবাদত ধ্যানমগ্ন শিক্ষাদান জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেন দিনরাত জেরুজালেমের হয়ে চলে যান মদিনায় বিশ্ব নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত শেষে চলে আসেন মক্কায় হজ পালন করেন এরপর চলে যান আলেকজান্দ্রিয়ায় সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে আবার ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) এর আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছিল অত্যন্ত গভীর আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য তিনি অত্যন্ত নিবিড় ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।
ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) আত্মা ও সৃষ্টি রহস্য
তার মতে আত্মা ও সৃষ্টি রহস্য এবং আল্লাহর অস্তিত্ব যুক্তির তর্কে মীমাংসা করার বিষয় নয় বরং সেরূপ চেষ্টা করা ও অন্যায় আল্লাহর অস্তিত্ব ও সৃষ্টি রহস্য অনুমতির বিষয়ে পরম সত্য অনন্তকে যুক্তি দিয়ে বোঝার কোনো অবকাশ নেই। ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) মতে যুক্তি দিয়ে আপেক্ষিকতা বোঝা যায় মাত্র। ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) সকল প্রশ্নের মীমাংসা করেছেন, কুরআন-হাদীস ও তারই ভিত্তিতে।
নিজের বিবেক বুদ্ধি সাহায্যে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ধর্মের প্রতি তার আস্থা ছিল পর্বতের ন্যায় অটল। ওষুধ ধর্ম ও দর্শন তার ছিল প্রভূত জ্ঞান ধর্ম ও যুক্তির বলাই নির্ধারণ করেছেন।
ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) মতে আত্মার ধ্বংসাবশেষঃ-
ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) বলেছেন আত্মা কখনো ধ্বংস হয় না। কিন্তু দেহ ধ্বংস হয়। আর মৃত্যুর পরও তা জীবিত থাকে। হৃদপিন্ডের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। হৃদপিণ্ড একটি মাংসপিণ্ড মাত্র। মৃত্যুর পরও দেহের এর অস্তিত্ব থাকে। কিন্তু আত্মার মৃতদেহের অবশিষ্ট থাকে না। মৃত্যুর পর আত্মা পরিপূর্ণ উৎকর্ষ ও মুক্তি সম্ভবপর হয়ে থাকে।
ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) ইসলামিক জ্ঞান বিজ্ঞানঃ-
তিনি ইসলামিক জ্ঞান বিজ্ঞানের দর্শন সাহিত্যের ইসলামের পুনঃজাগরণ ঘটিয়েছেন তিনি ইসলাম ধর্ম আদর্শ সুফিবাদের মূর্তিমান প্রতীক তিনি অন্ধ বিশ্বাসের উপর যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কিন্তু যা চিরন্তন সত্য ও বাস্তব সেখানে তিনি যুক্তি প্রাধান্য দিতেন না। বরং সে ক্ষেত্রে ভক্তি ও অনুভূতি কেই প্রাধান্য দিতেন। অংক শাস্ত্রীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে ছিল তার বিশেষ আগ্রহ সম্পর্কে তার বিশেষ ম্যাজিক স্কয়ার ওরাও ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) ব্যতীত ম্যাজিক করে মুসলিম বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেনি। ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) নক্ষত্রা ধীরগতি প্রকৃতির সন্ধানে দুটি গ্রহ রচনা করেন। সম্ভবত তাঁর আগ্রহ দুটি আজ প্রায় বিলুপ্তির।
ইমাম গাজ্জালীর (রাঃ) গ্রন্থ রচনা
এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় চার শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থ এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেন তার প্রণীত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
১। ইহিল উল উলমুদ দীন
পত্রিকা ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url